রবিবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৫



পুণ্যকর্ম কেন পুনঃ পুনঃ করা উচিত?
============================


এই গৌতমবুদ্ধের সময় রাজগৃহে এক দরিদ্রা স্ত্রী লাজ বিক্রয করে জীবন-যাপন করত। রাজগৃহে ‘পিপ্পলি গুহা’ নামে এক গুহা ছিল। মহাকশ্যপ যখন রাজগৃহে অবস্থান করেন তখন সেই গুহাতেই অবস্থান করতেন। একসময় তিনি সপ্তাহকাল নিরোধ-সমাপত্তিতে নিমগ্ন হন। সেই সমাপত্তি হতে উঠে কোন অভাগাকে তিনি অনুকম্পা করবেন চিন্তা করতে থাকেন। তাঁর করুণাজালে ঐ দুঃখী রমণীই পতিত হয়। ভিক্ষাপাত্র নিয়ে তিনি সেই দুঃখিনীর নিকট উপস্থিত হন। সেও প্রসন্ন চিত্তে তাঁর পাত্র পরিপূর্ণ করে খৈ দান করে প্রার্থনা করে- ‘এই পুণ্যপ্রভাবে আমি যেন আপনার দৃষ্টধর্মের ভাগী হই।'
.
যথাসময়ে সেই নারীর মৃত্যু হলে ঐ দানময় পুণ্যপ্রভাবে সে ত্রয়স্ত্রিংশ স্বর্গে ‘লাজ দেবকন্যা’ নামে উৎপন্ন হয়। তাঁর সেই বিপুল দিব্যসম্পত্তি লাভের হেতু মহাকশ্যপকে দানের ফল জেনে তাঁর লব্ধ সম্পত্তি স্থায়ী করবার ইচ্ছায় শেষরাতে সোনার ঝাড়– ও ঝুড়ি নিয়ে পিপ্পলিগুহার অঙ্গন পরিষ্কার করেন এবং পানীয় ও ব্যবহারের জল তুলে দেন। সকালে মহাকশ্যপ স্থবির তা দেখে মনে করেন কোন তরুণ ভিক্ষু বা শ্রামণ হয়ত এ ব্রত করেছে। তৃতীয় দিন শেষরাতে দিব্যজ্যোতিতে বিভূষিতা দেবকন্যাকে সেকাজ করতে দেখে তিনি বারণ করেন। দেবকন্যা নিজের পুণ্যসম্পদ অর্জনের জন্য সেই সেবাকাজে অনুমতি দেবার জন্য স্থবিরকে পুনঃপুন প্রার্থনা করেন। দেবকন্যার সেবা গ্রহণ ভিক্ষুর পক্ষে অনুচিত বলে তিনি অস্বীকার করেন। তথাপি বারবার অনুনয়-বিনয় করায় তিনি তুড়ি প্রহার করেন। দেবকন্যা চলে যেতে বাধ্য হন। যাবার সময় আকাশে স্থিত হয়ে কাঁদতে কাঁদতে প্রার্থনা করেন- ‘ভন্তে আমার লব্ধসম্পত্তি বিনাশ করবেন না। তা স্থায়ী করতে আমাকে অবকাশ দিন।’
.
ভগবান সুদূর জেতবন হতে দেবকন্যার কান্না শুনে বুদ্ধরশ্মি বিচ্ছুরিত করে দেবকন্যাকে উপদেশ দেন- ‘দেবতে! আমার পুত্র মহাকশ্যপের সংযম রক্ষা করা কর্তব্য। সুখকামীদের কিন্তু পুণ্যসম্পদ সঞ্চয় করা উচিত। তৎপর বুদ্ধ বলেন- পুণ্যকর্ম মানুষের পুনঃপুন করা উচিত এবং তার জন্য ইচ্ছা উৎপন্ন ও বর্ধন করা কর্তব্য। কারণ পুণ্যই জন্মজন্মান্তরে সর্বসুখের উৎস।
.
বুদ্ধের সেই ধর্ম শুনে ঐ দেবকন্যা স্রোতাপন্না হন। ঐ ধর্মদেশনা বহু দেবব্রহ্মার মহামঙ্গলদায়ক হয়েছিল।
.
সূত্রঃ [মহামংগল]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন