বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৪

কঠিন চীবর দান কঠিন কেন ?



আমরা সবাই বলে থাকি কঠিন চীবর দান করব। আসলে আদৌ আমরা কখনো কি চিন্তা করে দেখি, কঠিন বলা হয় কেন? সারা বছর যে কোন সময় আমরা চীবর দান করে থাকি। তাহলে চীবর দান এবং কঠিন চীবর দানের মধ্যে পার্থক্য কি?
এবার জানব চীবরকে কঠিন বলা হয় কেন? চীবরের আগে কঠিন শব্দটি যুক্ত হলো কেন?
ভগবান বুদ্ধ প্রমুখ সাধু ব্যক্তিগণ উত্তম-উত্তম বলে প্রশংসা করেন, তাই কঠিন বলা হয়েছে। কঠিন চীবর দান কর্মকে সাধু সজ্জন, জ্ঞানী পন্ডিত ব্যক্তিগণ উত্তম বলে প্রশংসা করেন তাই এই দান কর্মকে কঠিন চীবর দান বলা হয়েছে।
এখন প্রশ্ন প্রশংসা করে কেন?
কঠিন চীবর দানকে তিনটি কারণে প্রশংসা করা হয়েছে।
১) কঠিন চীবর দান ---- সংঘদান হয় বলে,
২) কঠিন চীবর দান ---- বিশেষ সংঘদান হয় বলে,
৩) কঠিন চীবর দান ---- ভিক্ষুসংঘের পাঁচটি আপত্তি দূর করতে সক্ষম বলে।
কেন সংঘদান? ঃ
আমরা যখন কঠিন চীবর দান করি, তখন বলি -------
ভন্তে আমরা সংসারের সকল প্রকার বট্ট-দুঃখ মোচনের জন্য, পরমসুখ নির্বাণ দর্শন লাভের জন্য অত্র কঠিন চীবর ভিক্ষু সংঘকে দান করছি, পূজা করছি। কাকে দান করছি? ভিক্ষু সংঘকে। ভিক্ষু সংঘ বললে আমাদের ভগবান বুদ্ধসহ অতীত অতীত যতো ভগবান বুদ্ধ উৎপন্ন হয়েছিলেন আগামীতে যতো বুদ্ধ উৎপন্ন হবেন এবং অতীত, বর্তমান, অনাগত সকল ভগবান বুদ্ধকে ও তাঁদের সংঘকে উদ্দেশ্য করে দান দেওয়া হয়। তাই এই দান এতো বি¯তৃত, এতো বিশাল। তাই এ দানকে সাধু ব্যক্তিগণ প্রশংসা করেন বলেই এই দানটি কঠিন। কঠিন অর্থ স্থায়ী, গভীর, পাকাপোক্ত, পরম। যে পুণ্যের ক্ষয় নেই, যে পুণ্যের নষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই। ইহা একটি মহাসংঘ দান।
এই দান পুগগলিক দান নহে। তাই কঠিনচীবর দান সবার কর্তৃক প্রশংসিত। ভগবান বুদ্ধ সাংঘিক দানকে প্রশংসা করে বলেছেন ----- যিনি ভিক্ষু সংঘকে উদ্দেশ্য করে দান করেন, উক্ত দাতাগণ উত্তমভাবে দান করেছেন, উত্তমভাবে পূজা করেছেন বলা হয়। সংঘের নিকট প্রতিষ্ঠিত উক্ত দানকে মহাফল দায়ক মর্মে লোকবিদূ ভগবান সম্যক সম্বুদ্ধগণ প্রশংসা করেছেন। সংঘকে দান করা শ্রেষ্ঠ দান হয়, প্রকৃত দান হয়।
বিশেষ সাংঘিক দান ঃ
শুধু সাংঘিক নয়, বিশেষ শব্দটি যুক্ত হয়েছে। কেন বিশেষ সাংঘিক দান বলা হয়েছে?
১) ইহা একটি বিশেষ কালে দান (কাল)
২) কঠিন চীবর গ্রহণে উপযুক্ত ভিক্ষুকে দান দিতে হয় (পাত্র)
বিশেষ কাল-দান ঃ
কঠিন চীবর সারা বছর দান করা যায় না। বছরে মাত্র ৩০ দিনের মধ্যে এই দান করা যায়। আশ্বিনী পূর্ণিমার পরবর্তী দিন থেকে শুরু করে কার্তিকী পূর্ণিমা পর্যন্ত এই ৩০ (ত্রিশ) দিন কঠিন চীবর দানের কাল। বিশেষ সময়কালে দান করতে হয় বলে তাকে কাল-দান বলা হয়।
উপযুক্ত ভিক্ষু কে? ঃ
যে ভিক্ষু বা ভিক্ষুগণ আষাঢ়ী পূর্ণিমার পরবর্তী দিন থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত এই তিন মাস বর্ষাবাস ভঙ্গ করেননি, এইরূপ পুরিম (প্রথম) বর্ষাবাসকারী ভিক্ষুগণ কঠিন চীবর গ্রহণে উপযুক্ত।
যে সকল ভিক্ষু দ্বিতীয় বর্ষাবাস করবেন বা বর্ষাবাস ভঙ্গ করবেন তাঁরা কঠিন চীবর গ্রহণ করতে পারেন না। তাই ভগবান বুদ্ধ বলেছেন ----- ভিক্ষুগণ বর্ষাবাস থেকে উত্থিত হয়নি (বর্ষাবাস ভঙ্গ করেনি) ভিক্ষুগণকে কঠিন চীবর গ্রহণ করতে আমি বুদ্ধ অনুমতি প্রদান করছি বলে ভগবান বুদ্ধ আদেশ দিয়েছিলেন।
কঠিন চীবর দানের জন্য কাল ও পাত্র পাওয়া বড়ই দুর্লভ। তাই তা কঠিন এবং সাধুগণের দ্বারা প্রশংসিত।
ভিক্ষুগণের আপত্তি দূরকারী দান ঃ
কঠিন বলতে পাঁচটি সুফল অন্তঃকরণে সক্ষম বিধায় পাকাপোক্ত হয়। এখানে ভিক্ষুসংঘগণ পাঁচটি আপত্তি থেকে মুক্ত থাকতে পারেন এই অর্থেও কঠিন বলা হয়েছে।
কঠিন চীবর দানের আরো একটি বিশেষত্ব ----- কঠিন চীবর বলতে অতি উৎকৃষ্ট হতে হয়। মাতার নিকট থেকেও চেয়ে নিতে পারে না। আকাশ থেকে আপনাআপনি (বৃষ্টির ফোটা) ঝরে পড়ার ন্যায় সম্পূর্ণ অজ্ঞাত, অশ্র“ত, অদৃষ্ট চীবর হতে হয়। তখন কঠিন চীবর করা যায়। ইহা কঠিন চীবর দানের এক বিশেষত্ব হয়।
ভিক্ষু সংঘের কোন পাঁচটি আপত্তি দূর করে?
১। অনামন্তচার (অবগত না করে নিমন্ত্রণে গমন করা)
২। অসমাদানচার (ত্রি-চীবরের যাহা ইচ্ছা রেখে গমন)
৩। গণভোজন (গণভোজনে গমন)
৪। যাবদত্থচীবর (অধিষ্ঠান ব্যতিরেকে চীবর রাখা)
৫। যে বিহারের উদ্দেশ্যে দান হবে, সেই বিহারের সংঘগণ চীবরগুলোর মালিকানা দাবী করতে পারবেন।
কঠিন চীবর দানের উৎপত্তি ঃ
ভগবান বুদ্ধ শ্রাব¯তীর জেতবন বিহারে বাস করাকালীন কোশলরাজের বৈমাত্রেয় ভ্রাতা ত্রিশজন ভিক্ষুকে উদ্দেশ্য করে কঠিন চীবর দানের অনুমতি প্রদান করেছিলেন।
কোন এক সময় পাবেয়্যবাসী উক্ত ত্রিশজন ভিক্ষু পাবা নগর থেকে শ্রাবস্তীর জেতবনে ভগবান বুদ্ধের দর্শন লাভের উদ্দেশ্যে বের হয়ে আসেন। বর্ষাবাসের আর মাত্র দুই একদিন বাকী ছিলো। তাই তাঁরা শ্রাবস্তীতে পৌঁছতে না পেরে সাকেত শহরেই বর্ষাবাস যাপন করেন। বর্ষাবাস শেষ হলে ঐ ত্রিশজন ভিক্ষু ভগবান বুদ্ধের দর্শনে আসেন। তাঁদের পরনের চীবর ব্যতীত আর কোন অতিরিক্ত চীবর ছিলো না। ঐ একটি চীবরেই øান করতে হতো আবার শুকিয়ে গেলে গায়ে দিতে হতো। এভাবে রোদ বৃষ্টিতে ঐ এক জোড়া চীবর এক সময় ছিঁড়ে গিয়েছিলো এভাবে ছেঁড়া চীবর গায়ে দিয়েই অত্যন্ত ক্লান্ত অবসন্ন দেহে তাঁরা শ্রাবস্তীর জেতবনে ভগবান বুদ্ধের নিকট গমন করেন।

কঠিন চীবর দানের অনুমতি প্রদান ঃ
ভগবান বুদ্ধ চিন্তা করলেন -- আমি যদি কঠিনচীবরের অনুমতি দিতাম, তাহলে এ ভিক্ষুগণ দোয়াজিক খানি রেখে অন্য একটি পরিধান করে আসলে এতো কষ্ট পেতো না। কঠিনের অনুমতি পূর্বের বুদ্ধগণও প্রদান করেছেন তা দিব্য জ্ঞানে দর্শন করে ভগবান বুদ্ধ বললেন --- ভিক্ষুগণ সঠিকভাবে কোন দিন ভঙ্গ না করে প্রথম বর্ষাবাস পালনকারী ভিক্ষু কঠিন চীবর গ্রহণ করতে পারবে। আমি (বুদ্ধ) অনুমতি প্রদান করছি।
এভাবে ভগবান বুদ্ধ প্রথম কঠিনচীবর দানের ও গ্রহণের অনুমতি দিয়ে, দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের জন্য পূণ্য পারমী সঞ্চয়ের দুর্লভ সুযোগ দান করেন।
জগতের অন্যান্য দানে শুধুমাত্র দাতারাই দানের ফল প্রাপ্ত হন, গ্রহীতাগণ প্রাপ্ত হন না। কিন্তু এই কঠিন চীবর দানই একটি মাত্র আছে যে দানে দুই পক্ষই অর্থাৎ দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের মহাফল লাভ হয়। এই সকল বিবেচনা করেই ভগবান বুদ্ধ কঠিন চীবর দানের অনুমতি দিয়েছিলেন।
সর্বপ্রথম এই কঠিন চীবর দান করেন প্রধান উপাসিকা বিশাখা।
কঠিন চীবর দানের ফল ঃ
ত্রিচীবর(সংঘাটি, অর্ন্তবাস, উত্তরাসঙ্ঘ) এ তিনের যে কোন একটি চীবর দ্বারা কঠিন চীবর দান করা যেতে পারে। বুদ্ধ বলেছেন, জগতে প্রচলিত যত প্রকার দান আছে সর্বাপেক্ষা কঠিন চীবর দান হল দানের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। এ দানের দ্বারা শ্রেষ্ঠ সর্বপ্রকার পূণ্য লাভ হয়। এই পৃথিবীতে যতপ্রকার দান আছে যা একখানা কঠিন চীবর দানের তুলনায় ঐ দানের ফল ষোল ভাগের একভাগও হয় না। একনিষ্ট ব্রক্ষ্মলোক পরিমাণ উচ্চ রৌপ্য পর্বত দান করলেও একখানা কঠিন চীবর দানের তুলনায় ঐ রৌপ্য পর্বত দানের ষোল ভাগের একভাগও হয় না।
অতীতকালে মহাকারুণিক শরণঙ্কর বুদ্ধের সময়ে ভগবান গৌতম বুদ্ধের অগ্রশ্রাবক”সারিপুত্র মহাস্থবির” এক রাজ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নাম ছিল ”কম্বলরাজ কুমার”। যথাকালে তিনি রাজপদে অভিষিক্ত হলেন। একদিবসে কম্বলরাজ বিহারে গিয়ে বুদ্ধকে বন্দনা করে বললেন ------ ভান্তে, এখন আমরা কোন পুণ্য কর্ম সম্পাদন করব? বস্তুদানের মধ্যে যে দান সর্বোৎকৃষ্ট, সে দান সম্বন্ধে আমাদিগকে দেশনা করুন। তখন মহাকারুণিক শরণঙ্কর বুদ্ধ কঠিন চীবর দানের ফল বর্ণনা করে বললেন,
• যে ব্যক্তি সংঘকে কঠিন চীবর দানের জন্য বস্ত্র ক্রয় করে দেয় সে ব্যক্তি সর্বদা দেব মনুষ্যলোকে মহাধনী, মহাযশস্বী ও মহাভোগ সম্পদশালী হয়।
• যে ব্যক্তি সুতা তৈরী করে দেয় সে সর্বদা মুনষ্যলোকে সুখ ভোগ করে এবং সর্বদা সর্বকর্মে বিশারদ হয় ও কোন জন্মে কুজ হয় না।
• সংঘকে কঠিন চীবর দানের জন্য যে ব্যক্তি বস্ত্র ছেদন করে দেয়, সে জন্মে জন্মে ধর্মতঃ অর্থার্জনে পারদর্শী ও নিপুণ হয়।
• যে ব্যক্তি সংঘকে কঠিন চীবর সেলাইয়ের ব্যবস্থা করে দেয় সে মনুষ্যলোকে ঐশ্বর্যশালী ও মহাপ্রভাবশালী হয়। সে মনুষ্যলোক থেকে চ্যুত হয়ে দেবলোকে উৎপন্ন হয় এবং তথায় সর্বদা দেবগণের শ্রেষ্ঠ ঈশ্বর ও ঐশ্বর্যশালী দেবতা হয়ে তথায় সর্বদা সুখভোগ করে।
• যে ব্যক্তি সংঘকে কঠিন চীবর দান দেয়ার জন্য কঠিন চীবর সেলাই করে সে জন্মান্তরের সুরূপ হয়, মহাপ্রজ্ঞাবান এবং সর্বদা সুখলাভ করে। সে ভবে ভবে চর্তুদ্বীপের ঈশ্বর চক্রবর্ত্তী রাজা হয় এবং অসংখ্যবার প্রদেশের রাজত্ব প্রাপ্ত হয়। সেখান থেকে চ্যুত হয়ে দেবলোকে উৎপন্ন হয় এবং তথায় সর্বদা দিব্যসুখ ভোগ করে।
• যে ব্যক্তি সংঘকে কঠিন চীবর দান দেয়ার জন্য বস্ত্র রঞ্জন (রং) ও ধৌত কর্ম করে সে মনুষ্যলোকে উৎপন্ন হলে সর্বদা সুখী ও নিরোগী হয়। সে সুবর্ণ শরীর লাভ করে এবং সুরূপ সর্বজনের চিত্ত প্রসাদকর প্রিয়দর্শন হয়। সে দেবলোকে উৎপন্ন হলে দেবগণের প্রিয় হয়।
• যে ব্যক্তি কঠিন চীবরের গ্রন্থী (গিরা) সুতা দান করে সে সর্বদা পরিশুদ্ধ অবস্থা সম্পন্ন হয়ে সংসরণ করে, অপায়ে উৎপন্ন হয় না।
• যে ব্যক্তি শ্রদ্ধার সাথে কঠিন চীবর ধৌত করে সে সুগতি প্রাপ্ত হয়। সর্বদা দেব-নরলোকে সুখী হয়। সে সর্বদা সগৌরবে পূজিত ও সৎকার প্রাপ্ত হয় এবং মহাযশস্বী মহাভোগসম্পদশালী ও দীর্ঘায়ু সম্পন্ন হয়। সে সর্বদা দেবলোকে দেববৃন্দের এবং মনুষ্যলোকে মনুষ্যদের শ্রেষ্ঠ হয়। এভাবে বুদ্ধ কঠিন চীবর দানের ফল ব্যাখ্যা করলেন।
বুদ্ধ ভাষিত দানের ব্যাখ্যায় কঠিন চীবর দানের ”উত্তম দান” এর ফল বর্ণনা করতে গিয়ে নাগিত স্থবির বলেছিলেন, আমি একবার মাত্র কঠিন চীবর দান দিয়ে কল্প হতে বিগত ত্রিশ কল্প পর্যন্ত দুর্গত অনুভব করি নাই। আঠার কল্প দেবলোক সুখভোগ করেছি, ছত্রিশ বার দেবরাজ দেবকুলে রাজত্ব করেছি, ক্ষত্রিয় ব্রাক্ষণ কুলে জন্মগ্রহণ করেছি। সুমেরু পর্বত প্রমাণ রাশি করে সংঘ মধ্য ত্রিচীবর দান একখানা কঠিন চীবর দানের পুণ্যের ষোল ভাগের এক ভাগ হয় না, চুরাশি হাজার বিহার নির্মাণ করে দান করলে কঠিন চীবর দানের সমান ফল হয় না।

পরিশেষে আমাদের চিন্তা করতে হবে এতো পুণ্য কাজ করার পরে আমাদের আরো এগিয়ে যেতে হবে। কিভাবে? ভাবনার মাধ্যমে। শুধুমাত্র দান, শীলের মধ্যে থাকলে কোনদিন দুঃখ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয় যদি ভাবনা বিহীন থাকেন। দান, শীল নির্বাণে পৌঁছার সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। পরিপূর্ণতা এনে দেবে ভাবনা। কারণ শীল, সমাধি, প্রজ্ঞা এ তিনটা যদি না থাকে পরিপূর্ণতা নেই, নির্বাণ পাওয়া যাবে না। নির্বাণ যাওয়ার মার্গপথ হচ্ছে জ্ঞানে। মার্গজ্ঞান, ফলজ্ঞান ভাবনার মাধ্যমে উৎপন্ন করে দেখুন আপনার মধ্যে অনিত্য আছে। অনিত্যকে যদি আপনি একবার দর্শন করেন ইহাই বিদর্শণ। একবার যদি বিদর্শন জ্ঞান উৎপন্ন করতে পারেন অনিত্য দর্শনের মাধ্যমে আপনার জীবন হবে সার্থক। তাহলে পরবর্তী যে কোন এক জন্ম আপনি সম্পূর্ণভাবে অনিত্য, দুঃখ, অনাত্ম দর্শন করে চতুরার্য সত্য দর্শন করে অরহত্ত্ব মার্গফল লাভ করে নির্বাণ দর্শন করতে পারবেন।
পৃথিবীর সকল দেব, নাগ, ব্রক্ষ্মা, যক্ষ, অসুর, রাক্ষস, ভূত, প্রেত, সকল মনুষ্য, সকল অমনুষ্য, সকল হিংস্র জীবজন্তু, উপরে ভবাগ্রে থেকে নীচে অবীচি পর্যন্ত একত্রিশ লোকভূমির সকল সত্ত্বকে কায়-মনো-বাক্যে আমার সকল মৈত্রী এবং পুণ্যরাশি দান করছি। সকলেই আমার মৈত্রী এবং পুণ্যরাশি লাভ করিয়া শোকমুক্ত, রোগমুক্ত, দুঃখমুক্ত, ভয়মুক্ত, বিপদমুক্ত, অন্তরায়মুক্ত, উপদ্রববিহীন, শংকা এবং উদ্বিগ্নবিহীন হউক।
সকলের মঙ্গলময় মনষ্কামনা পরিপূর্ণ হউক। সকলের চিত্ত অন্তর সুখী হউক।

মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৪

[]> নরকের তালিকা থেকে আপনার নামটি মুছে ফেলুন <[]



মানবজন্ম বড় দুর্লভ। অনেক সাধনার বিনিময়ে আমরা মানব জীবন লাভ করে থাকি। কিন্তু আমরা অনেকেই দানরত না হয়ে, পোষদের দিনে শীল পালন না করে এবং ধর্মোপদেশ গ্রহণ না করে কেবল জাগতিক সুখে মত্ত থাকি। প্রকৃতপক্ষে সকল জাগতিক সুখ ও বস্তু সম্পদের চেয়ে একজন মানুষের মনই হচ্ছে অধিক মহার্ঘ। মূলত মনই হচ্ছে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের প্রধান সম্পদ বা সঞ্চিত ধন। সুতরাং মনকে ভালভাবে দেখাশুনা করা উচিত। মনের প্রকৃত স্বভাব উপলব্ধি করাই হচ্ছে প্রকৃত ধর্মের উপলব্ধি। মনকে বুঝা মানে ধর্ম বুঝা। একইভাবে যিনি মনকে জানেন, তিনি সমগ্রভাবে ধর্ম জানেন। ত্রিলোকের সকল স্বত্তগন হচ্ছে মন দ্বারা গঠিত স্বত্ত(Mind made beings)। স্বর্গ ও নরকও মন দ্বারা সৃষ্ট। তাই নরকের তালিকা থেকে নামটি মুছে ফেলতে চাইলে সতত শীল, সমাধি ও প্রজ্ঞার অনুশীলনের মাধ্যমে জীবনের প্রীতিটি মুহূর্তকে অধিকতর মঙ্গলময় ও সার্থক করে তুলুন। কারণ প্রীতিটি মুহূর্তে জ্বরা, ব্যাধি এবং মৃত্যু আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। যদি কোন কারণে নরকে পতিত হতে হয়, তাহলে আমাদের অস্থিত্বটাই ওখানে সাধারণ প্রাণীর চেয়েও নিদারুণ যন্ত্রণাদায়ক হয়ে পড়বে। তাই অবিদ্যার অনুবর্তী না হয়ে এই বিষয় গভীরভাবে অনুধাবন করা উচিত। কারণ অবিদ্যারুপ মেঘ প্রজ্ঞারুপ আকাশকে আচ্ছন্ন করার ফলে অসারকে সার এবং নরকের ক্ষুরচক্রকেও স্বর্গের প্রস্ফুটিত শতদল মনে হয়। এ বিষয়ে চতুদ্বার জাতকে মিত্রবিন্দকের কাহিনী থেকে সুস্পষ্টভাবে বোধগম্য হওয়া যায়। মিত্রবিন্দক ছিলেন নিতান্ত দুঃশীলপরায়ণ। তিনি একদিন সঙ্কল্প করলেন যে, একটি নৌকা সংগ্রহ করে বাণিজ্য করবেন। তিনি তার মাতাকে জানালে মাতা তাঁকে না যাওয়ার জন্য নিবারণ করে তার হাত ধরে থাকলেন কিন্তু পাপাত্মা মাতার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে তাঁহাকে প্রহার করে ভুতলে ফেললেন এবং সেই মুহূর্তেই গৃহ থেকে বাহির হয়ে পোতারোহণে সমুদ্রযাত্রা করলেন। পাপাচার-বশত তার পোত সমুদ্রবক্ষে নিশ্চল হয়ে রইলেন। পোতারোহিগণ, তাহাদের মধ্যে কে কালকর্ণিক, তা নিরূপণ করার জন্য গুটিকাপাত করেল ইহা তিন বারই মিত্রবিন্দকের নামে নিপতিত হল। তখন তারা মিত্রবিন্দকের জন্য একটি ভেলক প্রস্তুত করে তাকে সমুদ্রে নামিয়ে দিলেন। মিত্রবিন্দক ভেলকারোহণে ভাসিতে ভাসিতে একটা প্রাকার-পরিবেষ্টিত চতুদ্বার নগরে উপস্থিত হলেন। এই নগর হচ্ছে উৎসাদ নামক নরক। এখানে বহুজীব নিরয়গামী হয়ে তাদের স্বীয় কর্মফল ভোগ করে থাকেন। কিন্তু মিত্রবিন্দকের দৃষ্টিতে ইহা অতি মনোহর স্থান বলে প্রতীয়মান হল। তিনি ভাবলেন, আমি এই নগরে প্রবেশ করে এখানকার রাজা হব। অতপর নগরে প্রবেশ করে তিনি দেখলেন, এক পাপী মস্তকে ক্ষুরচক্র বহন করে নরকযন্ত্রণা ভোগ করতেছেন। কিন্তু মিত্রবিন্দক মনে করলেন ইহা ক্ষুরচক্র নহে, স্বর্গের প্রস্ফুটিত শতদল। তার সমীপবর্তী হয়ে মিত্রবিন্দক বললেন, আপনি ত অনেকক্ষণ এই পদ্মটি মাথায় ধারণ করে আছেন। আমায় একবার ধরতে দিন। লোকটি বললেন, ইহা পদ্ম নয়, ক্ষুরচক্র। কিন্তু মিত্রবিন্দক তা কর্ণপাত করল না। তখন নিরয়বাসী লোকটি ভাবলেন, এও মনে হয় আমার ন্যায় মাতাকে প্রহার করে এখানে উপস্থিত হয়েছেন। তখন লোকটি মিত্রবিন্দকের মাথায় ক্ষুরচক্রটি রাখা মাত্রই তার মস্তক পেষণ করতে লাগল। মিত্রবিন্দক তখন বুঝতে পারলেন যে ইহা প্রকৃতই ক্ষুরচক্র। অবিদ্যার ফলশ্রুতিতে তাঁকে নরকযন্ত্রনা ভোগ করতে হচ্ছে। তাই আমাদেরও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে প্রতিনিয়ত কুশল কর্মে রত থেকে পুণ্য সঞ্চয়ের সাহায্যে নরকের তালিকা থেকে সবার নামটি মুছে ফেলা উচিত। বাংলাদেশের ন্যায় অপ্রতিরুপ দেশে থেরবাদী বৌদ্ধ হয়ে জন্ম নেওয়াটাই আমাদের জন্য পরম পাওয়া এবং ইহাই নরকযন্ত্রনা থেকে পরিত্রানের এক সুবর্ণ সুযোগ। 
পঞ্চবিধ দোষ বিবর্জিত, পঞ্চবিধগুণ সমন্বিত কঠিন চীবর ভিক্ষু সংঘের বিশুদ্ধি সাধনে সহায়তা করে, সেই কারণে কঠিন চীবর দান সর্বোত্তম দান...।



আপনিও সর্বোত্তম দানের মহান পূণ্যের ভাগীদার হতে আপনার নিকটস্থ বিহারটিতে শুভ কঠিন চীবর দানে অংশগ্রহণ করুন, অন্যকেও কঠিন চীবর দানে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করুন...................




সোমবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৪

আসছে ২৪-১০-২০১৪ ইং তারিখে মিরসরাই থানাধীন ঐতিহ্যবাহী মায়ানী বড়ুয়া পাড়ায় বহুল আলোচিত "মায়ানী গৌতম বিহার কমপ্লেক্স" এ দান শ্রেষ্ঠ দানোত্তম শুভ কঠিন চীবর দানোসব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে আপনারা সবাই আমন্ত্রিত ।

মায়ানী, মিরসরাই চট্টগ্রাম।


মায়ানী গৌতম বিহারে শুভ প্রবারণা পূর্ণিমার সকালে অষ্টশীল ও পঞ্চশীল প্রার্থনায় অংশগ্রহনকারী উপাসক-উপাসিখা ও দায়ক- দায়িকার একাংশ।