মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৪

[]> নরকের তালিকা থেকে আপনার নামটি মুছে ফেলুন <[]



মানবজন্ম বড় দুর্লভ। অনেক সাধনার বিনিময়ে আমরা মানব জীবন লাভ করে থাকি। কিন্তু আমরা অনেকেই দানরত না হয়ে, পোষদের দিনে শীল পালন না করে এবং ধর্মোপদেশ গ্রহণ না করে কেবল জাগতিক সুখে মত্ত থাকি। প্রকৃতপক্ষে সকল জাগতিক সুখ ও বস্তু সম্পদের চেয়ে একজন মানুষের মনই হচ্ছে অধিক মহার্ঘ। মূলত মনই হচ্ছে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের প্রধান সম্পদ বা সঞ্চিত ধন। সুতরাং মনকে ভালভাবে দেখাশুনা করা উচিত। মনের প্রকৃত স্বভাব উপলব্ধি করাই হচ্ছে প্রকৃত ধর্মের উপলব্ধি। মনকে বুঝা মানে ধর্ম বুঝা। একইভাবে যিনি মনকে জানেন, তিনি সমগ্রভাবে ধর্ম জানেন। ত্রিলোকের সকল স্বত্তগন হচ্ছে মন দ্বারা গঠিত স্বত্ত(Mind made beings)। স্বর্গ ও নরকও মন দ্বারা সৃষ্ট। তাই নরকের তালিকা থেকে নামটি মুছে ফেলতে চাইলে সতত শীল, সমাধি ও প্রজ্ঞার অনুশীলনের মাধ্যমে জীবনের প্রীতিটি মুহূর্তকে অধিকতর মঙ্গলময় ও সার্থক করে তুলুন। কারণ প্রীতিটি মুহূর্তে জ্বরা, ব্যাধি এবং মৃত্যু আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। যদি কোন কারণে নরকে পতিত হতে হয়, তাহলে আমাদের অস্থিত্বটাই ওখানে সাধারণ প্রাণীর চেয়েও নিদারুণ যন্ত্রণাদায়ক হয়ে পড়বে। তাই অবিদ্যার অনুবর্তী না হয়ে এই বিষয় গভীরভাবে অনুধাবন করা উচিত। কারণ অবিদ্যারুপ মেঘ প্রজ্ঞারুপ আকাশকে আচ্ছন্ন করার ফলে অসারকে সার এবং নরকের ক্ষুরচক্রকেও স্বর্গের প্রস্ফুটিত শতদল মনে হয়। এ বিষয়ে চতুদ্বার জাতকে মিত্রবিন্দকের কাহিনী থেকে সুস্পষ্টভাবে বোধগম্য হওয়া যায়। মিত্রবিন্দক ছিলেন নিতান্ত দুঃশীলপরায়ণ। তিনি একদিন সঙ্কল্প করলেন যে, একটি নৌকা সংগ্রহ করে বাণিজ্য করবেন। তিনি তার মাতাকে জানালে মাতা তাঁকে না যাওয়ার জন্য নিবারণ করে তার হাত ধরে থাকলেন কিন্তু পাপাত্মা মাতার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে তাঁহাকে প্রহার করে ভুতলে ফেললেন এবং সেই মুহূর্তেই গৃহ থেকে বাহির হয়ে পোতারোহণে সমুদ্রযাত্রা করলেন। পাপাচার-বশত তার পোত সমুদ্রবক্ষে নিশ্চল হয়ে রইলেন। পোতারোহিগণ, তাহাদের মধ্যে কে কালকর্ণিক, তা নিরূপণ করার জন্য গুটিকাপাত করেল ইহা তিন বারই মিত্রবিন্দকের নামে নিপতিত হল। তখন তারা মিত্রবিন্দকের জন্য একটি ভেলক প্রস্তুত করে তাকে সমুদ্রে নামিয়ে দিলেন। মিত্রবিন্দক ভেলকারোহণে ভাসিতে ভাসিতে একটা প্রাকার-পরিবেষ্টিত চতুদ্বার নগরে উপস্থিত হলেন। এই নগর হচ্ছে উৎসাদ নামক নরক। এখানে বহুজীব নিরয়গামী হয়ে তাদের স্বীয় কর্মফল ভোগ করে থাকেন। কিন্তু মিত্রবিন্দকের দৃষ্টিতে ইহা অতি মনোহর স্থান বলে প্রতীয়মান হল। তিনি ভাবলেন, আমি এই নগরে প্রবেশ করে এখানকার রাজা হব। অতপর নগরে প্রবেশ করে তিনি দেখলেন, এক পাপী মস্তকে ক্ষুরচক্র বহন করে নরকযন্ত্রণা ভোগ করতেছেন। কিন্তু মিত্রবিন্দক মনে করলেন ইহা ক্ষুরচক্র নহে, স্বর্গের প্রস্ফুটিত শতদল। তার সমীপবর্তী হয়ে মিত্রবিন্দক বললেন, আপনি ত অনেকক্ষণ এই পদ্মটি মাথায় ধারণ করে আছেন। আমায় একবার ধরতে দিন। লোকটি বললেন, ইহা পদ্ম নয়, ক্ষুরচক্র। কিন্তু মিত্রবিন্দক তা কর্ণপাত করল না। তখন নিরয়বাসী লোকটি ভাবলেন, এও মনে হয় আমার ন্যায় মাতাকে প্রহার করে এখানে উপস্থিত হয়েছেন। তখন লোকটি মিত্রবিন্দকের মাথায় ক্ষুরচক্রটি রাখা মাত্রই তার মস্তক পেষণ করতে লাগল। মিত্রবিন্দক তখন বুঝতে পারলেন যে ইহা প্রকৃতই ক্ষুরচক্র। অবিদ্যার ফলশ্রুতিতে তাঁকে নরকযন্ত্রনা ভোগ করতে হচ্ছে। তাই আমাদেরও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে প্রতিনিয়ত কুশল কর্মে রত থেকে পুণ্য সঞ্চয়ের সাহায্যে নরকের তালিকা থেকে সবার নামটি মুছে ফেলা উচিত। বাংলাদেশের ন্যায় অপ্রতিরুপ দেশে থেরবাদী বৌদ্ধ হয়ে জন্ম নেওয়াটাই আমাদের জন্য পরম পাওয়া এবং ইহাই নরকযন্ত্রনা থেকে পরিত্রানের এক সুবর্ণ সুযোগ। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন